রোববার, ১৯ মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গোলাম কিবরিয়ার ভ্রমণ কাহিনী

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর

গোলাম কিবরিয়া
২৮ আগস্ট ২০২১

মাছে-ভাতে বাঙালি। বহু প্রচলিত এই প্রবাদের সঙ্গে যদি সুর মেলাতেই হয়, তবে এর সঙ্গে যোগ করতে হয় মাছের রাজা ইলিশ। ইলিশ-প্রেম বাঙালির বহু পুরোনো। রূপে, গুণে, গন্ধে, স্বাদে শ্রেষ্ঠত্বের কারণে সাহিত্যেও ইলিশের ব্যাপক জয়গান শোনা যায়। পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে বাঙালির যে কোনো উৎসব আয়োজনে সবার প্রথম পছন্দ হিসেবে প্রাধান্য পায় ইলিশ। বাংলাদেশের চাঁদপুরকে বলা হয় ইলিশের বাড়ি। চাঁদপুরে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ে এবং দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ ইলিশ চাঁদপুর থেকেই সংগ্রহ করা হয়। আর এই ইলিশের লোভে পুরো দেশ থেকে চাঁদপুরে ভিড় জমান হাজারো ইলিশপ্রেমী। সুস্বাদু ইলিশ ভাজা খেতে আর টাটকা ইলিশ কিনতে চাঁদপুরই প্রথম পছন্দ ইলিশপ্রেমীদের।

ঢাকা থেকে ইলিশরাজ্য চাঁদপুরে যেতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে ঢাকার সদরঘাট। সদরঘাট থেকে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বেশ কিছু লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সুবিধামতো যে কোনো একটিতে চড়ে বসতে পারেন। ঢাকা-চাঁদপুর রুটে প্রতিদিন চলাচল করে এমভি তাকওয়া, এমভি সোনারতরী, এমভি মেঘনা রানী, এমভি বোগদাদীয়া, এমভি ঈগল, এমভি আল বোরাক, এমভি তুতুল, এমভি রফরফ প্রভৃতি। এসব লঞ্চে ঢাকা-চাঁদপুর অথবা চাঁদপুর-ঢাকার ভাড়া প্রথম শ্রেণির একক কেবিন ৩০০-৫৫০ টাকা। প্রথম শ্রেণির দ্বৈত কেবিন ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা। তৃতীয় শ্রেণির ভাড়া জনপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা। বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে একসময়ে শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরীকে পাশ কাটিয়ে লঞ্চ এসে পড়বে মেঘনায়।

ঢাকা থেকে লঞ্চে চাঁদপুর পৌঁছতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। সদরঘাট থেকে ছেড়ে মেঘনা নদীতে পৌঁছতে সময় লাগে ঘণ্টা দুইয়ের মতো। এখান থেকে চাঁদপুর পৌঁছানো পর্যন্ত বাকি ২ ঘণ্টা সময়ের পুরোটাই দেখা যাবে ইলিশ ধরার দৃশ্য। রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরির মধ্যে চলতে থাকে জেলেদের ইলিশ ধরা। চাঁদপুর-লঞ্চঘাটে নেমে প্রথমেই বড় স্টেশনে যেতে পারেন। চাঁদপুরে সবচেয়ে বড় ইলিশের মোকাম এটি। এ ছাড়া বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জেলেরা ইলিশ নিয়ে আসেন এখানে। বাজার ঘুরে ইচ্ছা হলে পছন্দের ইলিশ কিনেও নিতে পারেন। সঙ্গে নিয়ে আসার জন্য বরফ দিয়ে ইলিশ প্যাকেট করারও ব্যবস্থা আছে এই বাজারে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর- এই তিন মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। আর এই মৌসুমকে ঘিরে সব সময় চাঁদপুর শহরের প্রধান মৎস্যকেন্দ্র তথা বড় স্টেশন ইলিশের আড়ত থাকে সরগরম। প্রতিদিন অন্তত ২০০ আড়তদার ও মাছ ব্যবসায়ীর ঘরে অন্যান্য মাছ ছাড়াও ৫০০ থেকে এক হাজার মণ ইলিশ কেনাবেচা হয়ে থাকে। লকডাউনের মধ্যেও ইলিশের এই বাজারে লোকজনের ভিড় ছিল। ট্রলার বা ট্রাক থেকে ইলিশ আনলোড করে মাছঘাটে ভাগ বসলেই ডাক ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতারা গাদাগাদি করে ভিড় জমান।

আশপাশে ছোট ছোট কিছু রেস্তোরাঁ আছে। এখানে খেয়ে নিতে পারেন তাজা ইলিশ ভাজা। রেস্তোরাঁ কিংবা হোটেলগুলোর মূল আকর্ষণই ইলিশ ভাজা। ইলিশের টুকরার সাইজ অনুযায়ী সাধ্যের মধ্যেই খেতে পারবেন গরম গরম তেলে ভাজা সুস্বাদু ইলিশ। খাওয়া শেষ করে যেতে পারেন হরিণা ফেরিঘাটে। শহর থেকে জায়গাটির দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। হরিণায় পদ্মার ওপারে শরীয়তপুর। এখানে আছে ইলিশের আরেকটি মোকাম। আকারে একটু ছোট। এখানে সব ইলিশই আসে পদ্মা থেকে।

ইলিশ ছাড়াও চাঁদপুরে আছে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনা। মোহনা থেকে নৌকায় পাড়ি জমালেই পাওয়া যাবে মেঘনা ও পদ্মার চর। যাওয়ার পথে নদীর বুকে জেলেদের মাছ ধরা, বিশাল জলরাশির কলকল ধ্বনি ও নদীর শীতল বাতাসের অনুভূতি মন ছুঁয়ে যাবে। বালুচরের পাশাপাশি নদীর উত্তাল ঢেউ আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে নিয়ে যাবে কক্সবাজার সৈকতে। তাই এর নাম রাখা হয়েছে মিনি কক্সবাজার। এই শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে 'ইলিশ চত্বর'। বাংলাদেশের একমাত্র মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটও চাঁদপুরে। নদীঘেরা এই ছোট্ট শহর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।

প্রয়োজনীয় তথ্য: চাঁদপুরের ইলিশ চেনার সবচেয়ে সহজ একটি উপায় আছে। এখানকার ইলিশ একেবারে রূপালি রং। আর অন্যান্য জায়গার ইলিশে রূপালি রঙের সঙ্গে লালচে আভা আছে। চিনতে না পারলে এখানকার ব্যবসায়ীরা সব ইলিশই চাঁদপুরের বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করেন। নোনা পানির ইলিশে রূপালি রঙের সঙ্গে লালচে আভা থাকে। মিষ্টি পানি বা নদীর ইলিশের রং চকচকে রূপালি হয়। 

কোথায় থাকবেন: চাঁদপুরে গিয়ে থাকতে চাইলে শহরেই পেয়ে যাবেন আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী থাকার মতো আবাসিক হোটেল। উল্লেখযোগ্য হোটেলের মধ্যে রয়েছে- রশীদ আবাসিক বোর্ডিং, গাজী আবাসিক বোর্ডিং, হোটেল রজনীগন্ধা প্রভৃতি।

জেগে উঠছে পর্যটন
মাওয়ায় প্রজেক্ট হিলসা

আপনার মতামত লিখুন