রোববার, ১৯ মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

মোখায় বিধ্বস্ত পর্যটন দ্বীপ সেন্ট মার্টিন

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার
১৫ মে ২০২৩

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল ছুঁয়ে গতকাল দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উপকূলীয় শহর সিত্তয়ের কাছে আছড়ে পড়ে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। এর প্রভাবে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ঝড়ের এক পাশের তাণ্ডবেই কক্সবাজারের দুই হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি। মোখার আগ্রাসনে মিয়ানমারের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের পর্যটন দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মোখা উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশ উপকূল পেরিয়ে যায়। এটি দুর্বল হয়ে মিয়ানমারের সিত্তয়েতে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। এরপর স্থলভাগে আরো উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে আপাতত সব মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোখার দাপটে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যে প্রবল ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, সেই আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। অনেকে আবার প্রবাল দ্বীপ প্লাবিত হওয়ারও আশঙ্কা করেছিল। সে পরিস্থিতিতে আগেভাগেই প্রচুর মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্র এবং বিভিন্ন শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল সকালে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের যত কাছে মোখা এগিয়ে আসতে থাকে, ততই তাণ্ডব শুরু হয় সেন্ট মার্টিনে। রাস্তা কার্যত জনমানবশূন্য হয়ে যায়। আকাশ কালো হয়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিকাল ৪টা থেকে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয় সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। প্রায় ১ ঘণ্টা চলে ঝড়ের তাণ্ডব। বাতাসের বেগ এতটাই ছিল যে রাস্তা দিয়ে হাঁটা যাচ্ছিল না। প্রচুর টিনের বাড়ির চাল উড়ে গেছে। রাস্তায় রাস্তায় ভেঙে পড়েছে প্রচুর গাছপালা।

কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় মোখার আঘাত হানার পূর্বাভাস দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তার মূল গতিপথ পাল্টে মিয়ানমারের রাখাইনের দিকে অগ্রসর হয়। উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা থেকে এর আগে ১২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষকে কক্সবাজারের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয় বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমে যাওয়ায় সন্ধ্যার আগেই আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেন মানুষজন।

আজিজুর রহমান গতকাল রাত ৮টার দিকে বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের ওপর ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা আমাদের দেশ থেকে পুরোপুরি চলে গেছে। মানুষজন তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে।’ ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে আজিজুর রহমান বলেন, ‘ঝড়ের কারণে সেন্ট মার্টিনসহ টেকনাফের বেশকিছু অঞ্চল ও কক্সবাজারে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এমনটা যে হবে, সে বিষয়ে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। তবে ঝড় চলে যাওয়ায় অতিবৃষ্টি বা ভূমিধসের আর কোনো সম্ভাবনা নেই।’

সেন্ট মার্টিনে ১২০০ বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড : ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। জায়গায় জায়গায় উপড়ে পড়ে রয়েছে নারকেলসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ। জেটির কাছে যে হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো ছিল, সেগুলোর বেশির ভাগই ভেঙে পড়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। ঘূর্ণিঝড়ের সময় দ্বীপের বেশির ভাগ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান নেয়। মোখার প্রভাবে টেকনাফেও ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহিন ইমরান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে কক্সবাজারের দুই হাজার ঘরবাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার আরো ১০ হাজার ঘরবাড়ি। ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। শুধু সেন্ট মার্টিনেই ১ হাজার ২০০ ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়েছে। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।’ 

ওয়ালটন ফ্রিজ, টিভি, এসি ও ওয়াশিং মেশিন কিনে গাড়িসহ লাখ লাখ উপহার পাওয়ার সুযোগ
ঘূর্ণিঝড় মোখার আতঙ্ক কাটিয়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নামছেন পর্যটকেরা

আপনার মতামত লিখুন