কালের সাক্ষী ময়মনসিংহের নীলকুঠি গ্রাম
ময়মনসিংহ সদরের খাগডহরে ঐতিহাসিক গ্রাম নীলকুঠি। ব্রিটিশ আমলের নীল চাষের কথা এখনও এই গ্রামের প্রবীণদের মুখে। নীল চাষের জায়গাটি সংরক্ষণের দাবি করেছেন স্থানীয়রা। আর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মাধ্যমে এখানে খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রায় ৬০ বছর আগে নীলকুঠি গ্রামে বৌ হয়ে এসেছিলেন খুদেজা বেগম। এখন তিনি বিধবা। বিয়ের পর থেকেই শুনে আসছেন ব্রিটিশ শাসকদের নীল চাষের কথা। এই গ্রামে এখনও মাটি খুড়লে ব্রিটিশ আমলের সাক্ষী ইটসহ নানা জিনিসের চিহ্ন পাওয়া যায়।
গৃহিণী খুদেজা বেওয়া বলেন, ‘এখানে নীল শুকানো হতো, পাশে ছিল ড্রেন। সেই ড্রেন দিয়ে নীলের পানি যেতো- এগুলোই শুনেছি।’
স্থানীয় চাষীদের অত্যাচার-নির্যাতন করে ব্রিটিশ শাসকরা নীল চাষে বাধ্য করতেন। এখনও কালের সাক্ষী হয়ে আছে নীল চাষের দুটি পুকুর। পুকুরের আশপাশে রয়েছে ইটের চিহ্ন। স্থানীয়দের দাবি, খনন করা গেলে পুরনো অনেক সম্পদ মিলতে পারে। স্থানটি সংরক্ষণের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, ‘ইংরেজরা এখানে এসে কৃষকদের উপর জোর-জুলুম করে জমি নিয়ে নীল চাষ করতো, খাজনা আদায় করতো। সেই থেকে গ্রামটির নাম নীলকুঠি।’
এলাকাবাসীর দাবি, এই জায়গাটির উপর সরকার যেন শুভ দৃষ্টি দেয় এবং একটা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এটাকে চিহ্নিত করতে পারে।
দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পণে বর্ণিত হয়েছে নীল চাষের কাহিনী। এই জায়গাটিকে তাই স্মরণীয় করে রাখার দাবি এই সাহিত্যিকের।
কবি ও কথাসাহিত্যিক ফরিদ আহমেদ দুলাল বলেন, ‘নীলকুঠির ইতিহাস, নীল চাষের ইতিহাস- সেটিকে খুব সংক্ষিপ্তভাবে হলেও ওখানে যদি একটি স্থাপনা তৈরি করে তা লিখে রাখা যায় তাহলে এই প্রজন্ম ও আগামী প্রজন্মের মানুষ সেখানে গিয়ে ইতিহাসের এই অংশটির সন্ধান করতে পারবে।’
এদিকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে জায়গাটি খননের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘সেখানে তেমন যদি স্থাপনা থেকে থাকে তাহলে আমরা খননকার্য
চালানোর চেষ্টা করবো।’
ঐতিহাসিক নীলকুঠি গ্রামের পুকুর ও স্থাপনা সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চায় ময়মনসিংহবাসী।
আপনার মতামত লিখুন