গুড লাক বাংলাদেশ
‘গুড লাক বাংলাদেশ’। আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের মুখে মুখে এখন একই কথা। বাংলাদেশ দলের জন্য শুভকামনা। আগামীকালই আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল। ওয়ালটন সিরিজের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আয়ারল্যান্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ক্রিকেটের খুব ভক্ত। তার কারণ ওই একটাই- প্রিয় বাংলাদেশ খেলছে। খেলছে বেশ দাপটের সঙ্গে। বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ক্রিকেট শক্তি এখন বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডে বড় দলের মতোই খেলছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত অপরাজিত। আর একটা ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।
এখন পর্যন্ত ত্রিদেশীয় কোনো সিরিজের কাপ জেতা হয়নি তামিমদের। প্রথমবারের মতো সেটা জেতার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। দরকার আর মাত্র একটা জয়। এ নিয়ে ভক্তরা কেউ আত্মবিশ্বাসী, কারো মনে ভয়।
মনে যাই থাকুক, সবার প্রত্যাশা- ডাবলিনের মালাহাইড গ্রাউন্ডে কাপটা উঁচিয়ে ধরুক মাশরাফিরা। প্রত্যাশার পেছনে তারা যথেষ্ট জ্বালানিও খুঁজে পেয়েছেন এরই মধ্যে। প্রথমত প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এই সিরিজেই দুবার হারিয়েছে বাংলাদেশ। দুবারই বিশাল ব্যবধানে। অনেকটা হেসে খেলে। বলতে গেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোনো পাত্তাই পায়নি। কখনোই মনে হয়নি বাংলাদেশ হারতে পারে। ব্যাটিং বোলিং দুদিকেই প্রতিপক্ষের চেয়ে উজ্জ্বল ছিল টিম বাংলাদেশ।
স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে পণ্ড হলেও বুধবারের ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছে আরো সহজ করে।
এই জয়গুলো এমনভাবে এসেছে যা আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশের ভক্তরা। এর আগে বাংলাদেশ কোনো টুর্নামন্টের ফাইনালে উঠলেও অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে, চড়াই উৎরাই পেরিয়ে যেতে হয়েছে। তাই কাপ জেতা নিয়ে ছিল সংশয়। এবং জেতা হয়েও উঠেনি। তখন মিডিয়ার সামনে সাকিব- মুশফিকদের বলতে হয়েছে-‘যদি আমরা ভালো ক্রিকেট খেলি তাহলে আমরা জিতব’। কিন্তু এবার সত্যিই ফেবারিটের মতোই খেলেছে বাংলাদেশ। বড় দলের মতোই খেলেছ। কোনো তাড়াহুড়ো নেই। টার্গেট যত বড়ই হোক; ধীরে ধীরে, ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করেছেন দলের প্রতিটি খেলোয়াড়। সত্যি বলতে কি এরকমটা আগে কখনো দেখা যায়নি। এই পারফরমেন্সই সবার কাছে আশা জাগানিয়া। তাই কাপ জেতা নিয়েও সবাই আশাবাদী।
তবে ভয়ের বিষয় হচ্ছে খেলাটা ক্রিকেট। কখন কি হয় বলা যায় না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরপর দুবার হারলো বাংলাদেশের কাছে। নিশ্চয় ফাইনালে তারা এর বদলা নিতে চাইবে। প্রতিপক্ষের কোনো দুর্বলতা খুঁজে নিয়ে সেখানে আঘাত হানতে চাইবে। ভয়ের কারণ আছে আরো একটা। ফাইনালে কিছুটা হলেও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আকাশ মেঘলা থাকবে।
ক্লোনটার্ফের গ্যালারিতে কথা হয়েছিল বাংলাদেশের সমর্থকদের সঙ্গে। পাঁচ বছর ধরে গলওয়ে শহরে থাকেন ইসরাফিল দেওয়ান। প্রথবারের মতো বাংলাদেশ দলের খেলা দেখছিলেন মাঠে বসে। তিনি জানালেন, দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবকিছুই তিনি পজিটিভ দেখছেন। এতে মনে হচ্ছে এবার হয়তো একটা ত্রিদেশীয় ট্রফি জিতবে বাংলাদেশ। তবে তার মনে সংশয়ও আছে। প্রথম রাউন্ডে একটা ম্যাচ হারলেই বরং ভালো হতো। সেই হারটা যদি ফাইনালে হয় তাহলে কষ্টের আর সীমা থাকবে না।
ডাবলিন থেকে তিন ঘণ্টার রাস্তা কর্ক। সেখান থেকে এসেছিলেন সজিব। ডাবলিনে বাংলাদেশের খেলা হলেই তিনি মাঠে চলে আসেন। নিজেও ক্রিকেট খেলেন। ১৫ মে ছিল তার এবং তার পিতার জন্মদিন। মাঠেই দিনটা কাটিয়ে দিলেন তিনি। বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। ফাইনাল জেতার ব্যাপারে তিনি বেশ আশাবাদী। বললেন, যেভাবে খেলছে বাংলাদেশ, না জেতার কোনো কারণ দেখি না। যদিও খেলবেন ক্রিকেটাররা কিন্তু মাঠের বাইরে পুরো বাংলাদেশের সঙ্গে আয়ারল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দোয়া করবেন জেতার জন্য।
যেখানেই বাংলাদেশ দলের খেলা প্রায় সেখানেই দেখা যায় শাহীনকে। ঝাঁকড়া চুলের এই ক্রিকেট ভক্ত এখন ডাবলিনে। বুধবার পুরো গ্যালারি মাতিয়ে রেখেছেন একাই। এক বাক্যে বললেন, ওয়ালটন ট্রাই সিরিজের কাপ বাংলাদেশ জিতবেই। আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচে অনেক ক্যাচ ফেলেছে। এটা কারেকশন করতে হবে। টিম হিসেবে দুর্দান্ত খেলছে টাইগাররা।
জুয়েল জালালী, ফারুক জ্বালালী এসেছিলেন কিলকেনী থেকে। সঙ্গে বোন-দুলাভাই, সন্তান-ভাতিজা সবাইকে নিয়ে এসেছিলেন। একটা মিনি তবলা নিয়ে এসেছিলেন ফারুক। দারুণ বাজাতে পারেন। বললেন, দুবছর আগেও সিরিজেও টাইটেল স্পন্সর ছিল ওয়ালটন। এবারের সিরিজেও। এটা খুব ভালো লেগেছে তার। আগের সিরিজের সবগুলো ম্যাচ দেখেছেন মাঠে বসে। সেবার ফাইনালে হেরে গিয়েছিল। এবার আর হারতে চান না তিনি।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহর থেকে এসেছেলিন সাইফুল। ডাবলিন থেকে বিমানে এক ঘণ্টার পথ। বাংলাদেশের খেলা মাঠে বসে দেখ তার জন্য ভাগ্যের বলের বলে জানালেন। আয়াতুল্লাহ মিলকি, নজরুল ইসলাম, জয় ইসলাম এরকম শত শত বাংলাদেশি গ্যালারিতে বসে খেলা দেখেছেন স্বপরিবারে। তাদের একটাই প্রত্যাশা- এবার ফাইনালের কাপটা অধিনায়ক মাশরাফির হাতেই উঠুক।
এদিকে রোজার দিন বলে মাঠে এবার দর্শক সংখ্যা কম। আগে উত্তর আয়াররল্যান্ড, লন্ডন, স্কটল্যান্ড এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে দর্শক আসতো ডাবলিনে খেলা দেখতে। সামনে বিশ্বকাপ বলে সবার নজর এখন সেদিকেই। তাছাড়া এবার টিকিটের দাম অনেক বেশি। বাচ্চাদেরও টিকিট লাগতো। বিয়য়টি বিবেচনা করে ফাইনালে বাচ্চাদের টিকিট লাগবে না- এরকম ঘোষণা এসেছে।
পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাংলাদেশের মানুষ থাকুক না কেন- সবার প্রত্যাশা, বিশ্বকাপের ঠিক আগে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল জিতুক প্রিয় বাংলাদেশ। তাহলে ৩০ মে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপে আত্মবিশ্বাসী এক বাংলাদেশকেই পাবেন ক্রিকেট ভক্তরা।
আপনার মতামত লিখুন